৭ই মার্চের ভাষণ প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গভূমি বিভিন্ন শাসকের অধীনে শাসিত হয়েছে। যদিও অনেক সময় এ অঞ্চলের শাসকেরা নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করেছিল, প্রকৃত অর্থে ১৯৭১ সালের আগে বাঙালিরা কখনো পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন—হাজার মাইলের ব্যবধান থাকা দুটি অঞ্চল নিয়ে। তবে ধর্মীয় পরিচয় নয়, বাঙালির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যই তাদের জাতিগত স্বাতন্ত্র্য নির্ধারণ করেছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই পূর্ব বাংলার জনগণ বুঝতে পারে, এটি ছিল একটি অবিবেচনাপ্রসূত ও বাস্তবতা-বিবর্জিত সিদ্ধান্ত। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে শুধুমাত্র শোষণের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে। অর্থনীতি, প্রশাসন এবং ভাষার মতো মৌলিক বিষয়গুলোতে বাঙালিদের প্রতি অবহেলা ও বৈষম্য ছিল প্রকট। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে পড়ে।
৭ই মার্চের ভাষণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের চেতনা এক নতুন জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর অংশ হয়ে বাঙালিরা উপলব্ধি করে যে, তাদের জন্য প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র পথ আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই বোধই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির মাইলফলক স্থাপন করে।
Reviews
There are no reviews yet.